তালবিয়া

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক লা শারি-কা লাক

অর্থঃ

আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।

১) হজের গুরুত্ব

হজ বিশ্ব মসুলিমের মহাসম্মিলন যা আল্লাহ কর্তৃক ফরজ ইবাদত ইচ্ছা করলেই কেউ হজ করতে পারবে না হজের গুরুত্ব বুঝতে হবে থাকতে হবে আর্থিক এবং শারীরিকভাবে সক্ষমতা যা হজের নির্ধারিত সময়ে বাইতুল্লায় উপস্থিত হয়ে কাজগুলো যথাযথ নিয়মে আদায় করতে হয় তাইতো হজ শুধু ইবাদত নয়, এতে রয়েছে স্পেশাল কিছু বিষয়। যে কারণে বিশ্ব মসুলিম বাইতুল্লায় একত্রিত হয়ে ওয়াহদানিয়্যাত তথা একত্ববাদের দীক্ষা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। তাইতো হজের ইবাদতে রয়েছে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব হজ সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো – সারা বছর মানুষ হজে আসে না যখন শাওয়াল মাস আসে, তখন বিশ্ব মসুলিম ইবাদত পালনে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি শুরু করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মসুলিমগণ পিছু নেয় কা’বার। লাখ লাখ মানুষ হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এসে বাইতুল্লায় উপস্থিত হয় হজে গমনকারীদের লাব্বাইক আওয়াজ শুনেই কত মূর্দা দিল মসুলমানের আত্মা হয়ে যায় জিন্দা তথা তাজা-তরতাজা খুজঁতে থাকে আল্লাহ প্রাপ্তির পথ মিকাতে (ইহরাম বাধার স্থান) এসে যার যার দেশীয় পোষাক পরিহার করে, পরিধান করে ইহরামের পোষাক সব পুরুষের পোষাক এক রাজা-প্রজা, আমির-ওমরাহ, আলিম-ওলামা, সূফী-দরবেশগণ ভুলে যান ভেদাভেদ বিশ্ব মসুলিমের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয় সামিল হন এক কাতারে হজের সম্মিলনে মুমিন পরস্পর ভাই ভাই এর বাস্তব নমনুার চিত্র ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। হজের শিক্ষা, তাকওয়া নিয়ে বাইতুল্লাহ থেকে আবার মানুষ ফিরে যায় পৃথিবীর নানা প্রান্তরে হজের সম্মিলন দুনিয়াতে মসুলমানদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রূপ লাভ করে হজের সময় কখনো এই মহাসম্মিলন হজের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা যা সারা বছর আদায় করার বিধান নেই আল্লাহ তা’আলা বলেন যার মোটামুটি অর্থ “হজের মাসসমহূ সুনির্দিষ্ট” (সূরা বাকারা: আয়াত ১৯৭) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদীসে এসেছে – হযরত আবদল্লুাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন হজের মাসসমহূ হচ্ছে শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন (বুখারী)

দোয়া

রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার।

অর্থঃ

হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান কর। আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও।

২) হজের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে করণীয় কাজ

হজে গমনের আগেই হজ পালনেচ্ছুদের দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে প্রাথমিকভাবে নিজেদের তৈরি করে নেয়া জরুরী। হজের আগেই বাইতুল্লায় গমনকারীদের জন্য মৌলিক কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে হজের সফরে যার সামানা বা মালামাল কম হবে ওই ব্যক্তির হজের সফর হবে সুন্দর এবং কষ্টহীন।

হজে গমণের আগে করণীয়ঃ

👉👉হজে গমনকারী ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হলে হজে গমনের আগে ঋণ পরিশোধ করা।

👉👉হজে গমনকারী ব্যক্তির কোনো অসিয়ত থাকলে তা লিখিত আকারে তৈরি করে রাখা।

👉👉দুনিয়াবী সব ধরনের সমস্যা থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া।

এবং প্রতিবেশীসহ নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে দায় দাবী মুক্ত হওয়া।

হজের ইবাদতের প্রস্তুতিঃ

👉👉হজের তালবিয়া সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত করে নেয়া।

👉👉বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আত্মা বা দিলকে আল্লাহর প্রেমের উপযোগী করে তোলা।

👉👉হজ ও ওমরার রুকন তথা ইহরাম, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ’র দোয়া ও নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে শিখে নেয়া।

👉👉গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল এখন থেকেই শিখতে থাকা।

 

মনে রাখতে হবে-

হজে গমনের প্রস্তুতির অর্থ হলো- সেলাইবিহীন ইহরামের সাদা কাপড় পরিধান করে পরকালীন জীবনে গমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কারণ বাইতুল্লায় হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা-ই হতে পারে একজন আল্লাহ প্রেমিকের জীবনের শেষ যাত্রার প্রস্তুতি।

হজের আগেই যা বর্জন করা জরুরীঃ

 

👉👉দুনিয়ার সব ধরনের মোহ, লোভ-লালসা, তথা জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার সব মানসিকতা ত্যাগ করা।

👉👉সব ধরনের পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

👉👉হজে গমনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমকে জীবনের শেষ প্রস্তুতি মনে করে দুনিয়ার ভালোবাসা ত্যাগ করা।

👉👉আভিজাত্য, পদমর্যাদা, বংশ-গৌরব, গর্ব ও অহংকার ত্যাগ ও দুনিয়াবী ক্ষমতার মানসিকতা ত্যাগ করা।

👉👉হজের যে কোনো কাজেই তাড়াহুড়া, পেরেশানি ও উদাসিনতাভাব ত্যাগ করা।

👉👉দুনিয়াবী সব ধরনের অন্যায় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।

👉👉হজের সফলে কেউ কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে বা হজ এজেন্সি কোনো কাজ করে দেবে এ মানসিকতা ত্যাগ করা।

👉👉হজের সফরের লাগেজ সংগ্রহ, নাস্তা ও খাবার সংগ্রহ, কাপড়-চোপড় ধোয়া ও আয়রন করা ইত্যাদি কাজ নিজেই করতে হবে এ প্রস্তুতি নেয়া।

একটা কথা মনে রাখতে হবে-হজের সফরে কোনো ধরনের বেহুদা কথা বার্তা ও ঝগড়া-ঝাটি ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে যাওয়া। সব ক্ষেত্রে ত্যাগ ও ধৈর্যের মানসিকতা তৈরি করা।

পরিশেষে..হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত হজের কার্যক্রম এবং আত্ম বিসর্জনের যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে সে সব বিধি-বিধান পালন করে হজের সফরকে সফল করতে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ হজ পালনেচ্ছু সব হাজিদেরকে হজ্বের প্রাক-প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

৩) হজে যাওয়ার আগেই যে বিষয়ে খোঁজ নেয়া জরুরী

পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বাসা বা বাড়ি থেকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট ও আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অফিসিয়াল কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। হজের সফরের যে বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া সবার জন্য জরুরী; তা হলো-

33হাজিদের ব্যক্তিগত পরিচিতি (পিআইডি) নম্বর জেনে নিন।

33পাসপোর্টে ভিসা লেগেছে কিনা তা স্ব স্ব এজেন্সিতে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হোন।

33সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে টিকা গ্রহণপূর্বক মেডিকেল সার্টিফিকেট গ্রহণ করুন।

33ডায়াবেটিস, হার্টসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্তরা প্রেসক্রিপশনসহ ন্যূনতম ৫০ দিনের ওষুধ হজের সফরের জন্য সঙ্গে রাখুন।

33হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই আপনার ফ্লাইট শিডিউল জেনে নিন।

33সৌদি আরবে অবস্থানকালীন সময়ে যে হোটেল/বাড়িতে থাকবেন তার ঠিকানা স্বস্ব এজেন্সি থেকে জেনে নিন। মুয়াল্লিমদের সৌদির মোবাইল নাম্বারও জেনে নিন।

33হাজিদের জন্য নির্ধারিত আইডি কার্ড এবং বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত কবজি বেল্ট সংগ্রহ করুন।

33হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই হজের ভিসা লাগানো পাসপোর্ট, হজের অনুমতিপত্র ও বিমানের টিকিট সংগ্রহ করুন।

33হজের টাকা জমা দেয়ার ডুপ্লিকেট রশিদ ও মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ জরুরী কাগজপত্র সংগ্রহে রাখুন।

33হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ডলার অথবা সৌদি রিয়াল সংগ্রহ করুন।

33হজে রওয়ানা হওয়ার আগে হজের কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।

হজ পালনেচ্ছুদের উল্লেখিত বিষয়গুলোতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া উচিত। যা সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে হজ পালন হয়ে উঠবে ঝুঁকিপূর্ণ।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে সঠিক ও সুন্দর হজ সম্পাদনে হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই হজের ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট, টিকিটি, অনুমতিপত্র, মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথ সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

৪) হজে গমনকারীদের জন্য যে জিনিসপত্র সংগ্রহ করা আবশ্যক

হজ একটি যৌথ ও দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। এ সফরে মানুষকে দীর্ঘ দিন মক্কা ও মদিনায় অবস্থান করতে হয়। হজের সফর দীর্ঘ হলেও এ সফরে যত কম প্রয়োজনীয় মালামাল বহন করা যায় ততই মঙ্গল।

হজের এ দীর্ঘ সফরে যে সব পোশাক ও মালামাল (বৈধ অর্থের উৎস থেকেই হজের সব ধরনের খরচ আঞ্জামের ব্যবস্থা করা) একান্ত আবশ্যক তা হলো

33হালকা ও মোলায়েম ২/৩ সেট ইহরামের পোশাক ক্রয় করা;

33কোমরবন্দ (বেল্ট) সংগ্রহ করা, যাতে থাকবে পাসপোর্ট ও টাকা রাখার জন্য নিরাপদ পকেট;

33২ সেট পাজামা-পাঞ্জাবি নেয়া;

33২টি লুঙ্গি নেয়া;

33২টি টুপি নেয়া;

33২টি পাতলা গেঞ্জি নেয়া;

33২ জোড়া স্যান্ডেল নেয়া;

33২টি তোয়ালে বা গামছা নেয়া;

33সেন্ডেল রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগ নেয়া;

33তাওয়াফ, আরাফাহ, মুযদালিফা, মিনায় প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য একটি পিঠে বহন করার ব্যাগ সংগ্রহ করা;

33খাবার জন্য ১টি প্লেট ও ১টি পানির পট নেয়া;

33ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ নেয়া;

33চোখের সমস্যা থাকলে চশমা নেয়া;

33টুথ ব্রাশ, পেস্ট এবং মেসওয়াক নেয়া;

33৫ থেকে ১০ গজ নাইলনের রশি নেয়া;

33হজের মালামাল বহনের জন্য সাইজ অনুযায়ী লাকেজ ক্রয় করা;

বিশেষ করে-

নারী হজ যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, বোরকাসহ তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য অনুসঙ্গ সঙ্গে নেয়া।

মনে রাখতে হবে-

এ সব মালামাল বহনের সুবিধার্থে  লাগেজে পাসপোর্ট নাম্বার, মোবাইল নাম্বার এবং ঠিকানা রং দিয়ে লিখে নেয়া জরুরী

হজের সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পরিমাণে অল্প করে নিয়ে মক্কা-মদিনার এ দীর্ঘ সফরকে সুন্দর ও সার্থক করা সবার আবশ্যক কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা সব হজ পালনেচ্ছুকদের সুন্দরভাবে হজ সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

৫) হজে গমনকারীদের বিমানে ওঠার আগে করণীয়

পবিত্র হজ পালনে প্রত্যেক হাজিকেই বিমানযোগে মক্কা এবং মদীনায় যেতে হবে। বিমানে আরোহনের ক্ষেত্রে হাজিদের কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। বিমানে চড়ার ক্ষেত্রে অনেক যাত্রীকেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেলে রেখে যেতে হয়। এমনটি যাতে না ঘটে, আগে থেকেই জেনে নিন বিমানে আরোহনের ক্ষেত্রে হ্যান্ডব্যাগে কি কি জিনিসপত্র নিতে পারবেন।

প্রত্যেক হজযাত্রীর হাত ব্যাগে সাত কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না।

33বিমানে ভ্রমণকালে হ্যান্ডব্যাগে করে ছুরি, কাঁচি, সুঁই, নেইল কাটার নিয়ে আরোহন করে দেয়া হয় না;

33লাইটার, পেস্ট, স্প্রে, তরল পাণীয়সহ ধারালো জাতীয় কোনো জিনিস হাত ব্যাগে নেয়া যাবে না;

33বিমানে ভ্রমণের সময় চাল, ডাল, শুটকি, রান্না করা তরল খাবার, ফল, তরিতরকারী সঙ্গে বহন করা যাবে না;

33বিমানে ওঠার আগেই হজের সফরে আপনার গাইডারের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করুন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

33হজ পালনেচ্ছুদের মধ্যে যারা প্রথমে মক্কায় যাবেন তারা আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে ইহরামের কাপড় পরিধান করে রওয়ানা হবেন।

33হজ যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন।

মনে রাখবেন-

প্রত্যেক হজযাত্রীর হাত ব্যাগের সাইজ হবে- ২২সেমি.× ১০সেমি.×১৮ সেমি.-এর মধ্যে এবং হাত ব্যাগে ৭ কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না।

এ বিষয়গুলো জানা না থাকার কারণে অনেক হাজিকেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরে ফেলে রেখে যেতে হয়। যার জন্য পরবর্তীতে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদীনার দীর্ঘ সফরে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

আল্লাহ তআলা হজ পালনেচ্ছুদেরকে হজের সফর সুন্দর ও সার্থক করতে বিমানে আরোহনের আগে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান ও সতর্কতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

৬) বিমান থেকে নামার পর জেদ্দা বা মদিনায় হজ যাত্রীদের করণীয়

হজের সফরে রওয়ানা হয়ে হজ যাত্রীরা যখন বিমান থেকে নামবেন; তখন বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মক্কা ও মদিনার হোটেলে পৌছা পর্যন্ত রয়েছে অনেক কাজ। যা জেনে নেয়া জরুরী। এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো-

33বাংলাদেশি হজযাত্রীগণ জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশন শেষ করার পর নির্ধারিত শেড ‘বাংলাদেশ প্লাজা’য় অপেক্ষা করতে হবে। সেখান থেকে সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বাসে তাদের হোটেলে পৌঁছানো হবে।

33জেদ্দা বিমান বন্দরের সব কার্যক্রম সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কোনো কারণে দেরি হলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

33জেদ্দা বিমান বন্দরে কোনো সমস্যা হলে বাংলাদেশ প্লাজা সংলগ্ন হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

33বাস যাত্রার আগেই হজযাত্রীদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হবে।

33বিমানবন্দর থেকে মক্কা অথবা মদিনায় পৌঁছার পর বাস থেকে নেমে নিজ দায়িত্ব লাগেজ সংগ্রহ করে হোটেল/বাড়ির নির্ধারিত কক্ষে যেতে হবে।

মনে রাখতে হবে-

মক্কা বা মদিনায় গিয়ে লাগেজ বা মালামাল সংগ্রহ করার পর সিম কার্ড বা অযথা অন্য কোনো জিনিসের জন্য দেরি করা ঠিক হবে না। যত দ্রুত সম্ভব নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছে বিশ্রাম করা জরুরি। কারণ দীর্ঘ সফরের পর একটু বিশ্রাম না করতে পারলে হজের সফরের পরবর্তী কাজ ওমরাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে অসুবিধায় পড়তে হবে। হজের সফরের পুরো সময় সুস্থ্য থাকা অনেক জরুরী

আল্লাহ তাআলা হজের সফরের সব যাত্রীকেই সুন্দর ও নিরাপদে বিমানবন্দরের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত গন্তব্যে নিরাপদে পৌছার তাওফিক দান করুন। আমিন।

৭) হজে গমনকারীদের ওমরা পালনে করণীয়

যারা হজ উপলক্ষে প্রথমেই পবিত্র নগরী মক্কায় যাবেন তারা বাংলাদেশ থেকেই ইহরাম বেধে যাবেন। জেদ্দা বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে পবিত্র ভূমি মক্কায় গিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর শুরু করবেন হজের কার্যক্রম। হজযাত্রীদের মধ্যে যারা কিরান এবং তামাত্তু হজ আদায় করবেন, তাদের প্রথম কাজই হলো ওমরা সম্পাদন করা।

যারা প্রথমেই পবিত্র নগরী মক্কায় যাবেন তারা ওমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাবেন। অতঃপর হজের নির্ধারিত সময় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। হজের সময় হলে পুনরায় ইহরাম বেধে হজ সম্পাদন করবেন।

ওমরা পালনে করণীয়

হজযাত্রীগণকে সঠিকভাবে ওমরা সম্পাদনে দু’টি কাজ আদায় করতে হবে। আর তা হলো-

ওমরার ২টি ফরজ যথাযথ আদায় করা এবং দুইটি ওয়াজিব আদায় করার মাধ্যমে ওমরা সম্পাদন করা।

ওমরার ২ ফরজ

33 ইহরাম বাধা;

33 বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা;

ওমরার ২ ওয়াজিব

33 সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করা; 

33মাথা হলক বা মুণ্ডনের মাধ্যমে হালাল হওয়া;

এ দুটি কাজ পালনের মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহ ওমরার কাজ সম্পাদন করে থাকেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব তামাত্তু ও কিরান হজ পালনকারীদেরকে যথাযথভাবে ওমরা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

৮) মক্কা-মদিনায় অবস্থানের সময় যা মেনে চলা জরুরী

সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানগণ পবিত্র হজ পালনে মক্কা এবং মদিনায় একত্রিত হয়। হজের দিনগুলোতে মক্কা-মদিনায় ব্যাপক ভিড় থাকে। সেখানে সারা বিশ্বের মানুষগুলো ছোট ছোট কাফেলায় বিভক্ত হয়ে হজ সম্পন্ন করে থাকে।

তাদের নিরাপত্তার জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যেক হাজির দেশ ও হজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। যা মেনে চলা প্রত্যেক হাজির একান্ত প্রয়োজন। মক্কা এবং মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে প্রত্যেক হাজি যে কাজগুলোর প্রতি যত্নবান হবেন তা তুলে ধরা হলো-

33কোনো ভাবেই লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো হজযাত্রী তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করবে না। অনুমতি ছাড়া কাফেলার বাহিরে তাদের থাকার নিয়ম নেই।

33হজ যাত্রীই তাদের থাকার নির্ধারিত হোটেল বা বাড়িতে রান্না এবং কাপড় ইস্ত্রি করবে না।

33মক্কা অথবা মদিনায় পৌঁছার পর মোয়াল্লেম অফিস থেকে সরবরাহকৃত কার্ড সবসময় নিজেদের সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ ওই কার্ডেই মোয়াল্লেম অফিসের নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে।

33হজ আফিস থেকে সরবরাহ করা বাংলাদেশের পতাকাখচিত ছবিসহ আইডি কার্ড, হাতে লাগানোর কব্জি বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।

33যদি কোনো হজযাত্রী নির্ধারিত হোটেল/বাড়ি/তাবু থেকে হারিয়ে যায় তবে এ কার্ডই তাকে বাংলাদেশ হজ অফিসে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।

33হোটেল/বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার সময় একা একা না যাওয়াই উত্তম। সব সময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করার চেষ্টা করা।

33বাইতুল্লায় তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সাঈ এবং শয়তানেক পাথর মারার সময় প্রয়োজন অতিরিক্ত মাল-সামানা ও টাকা সঙ্গে না নেয়া।

33হজের সফরে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

33খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকা। কারণ এতে পায়ে ফোসকা পরতে পারে।

33রোদে ছাতা ব্যবহার, প্রচুর পানি ও ফলের রস পান করুন।

33ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা-আবর্জনা না ফেলা।ফেলবেন না।

33শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালিত ক্লিনিকে দ্রুত যোগাযোগ করা। কারণ সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে।

সুতরাং মক্কা এবং মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনোভাবেই উল্লেখিত জিনিসগুলো ছাড়া বাইরে যাওয়া-আসা বা অবস্থান করা ঠিক নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।